যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে বিএনপি। এজন্য ৩৭ লাখ ডলার ব্যয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। লবিস্ট প্রতিষ্ঠানকে ওই অর্থ বিএনপি কিভাবে দিয়েছে সেটি তদন্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শুধু তাই নয় লবিস্টকে ফার্মকে প্রদেয় অর্থ বৈধপথে আয় করে দেওয়া হয়েছে কিনা সেটি দেখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেও অনুরোধ জানাবে সরকার। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী একথা বলেন।
বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য আটটি চুক্তির কপি প্রতিমন্ত্রীর কাছে আছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এরমধ্যে নূন্যতম তিনটি চুক্তি করেছে বিএনপি।
তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে এই চুক্তিপত্রগুলো পাঠিয়ে দেবো। এখানে বিশেষ করে জাতীয়তাবাদী দলের ঠিকানা ব্যবহার করে এই চুক্তিগুলো করা হয়েছে। আমরা ধরে নিতে পারি জাতীয়তাবাদী দল সরাসরি এই টাকাগুলো দিয়েছে। এই টাকাগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে গেছে কিনা? যদি অনুমোদন না নিয়ে পাঠানো হয় তবে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন আছে, সেই আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশনকে জানাবে। নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করি।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন অনুযায়ী প্রতি বছর শেষে আয়-ব্যয় হিসাব প্রকাশ করার বিধান আছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেটি অনুযায়ী বিএনপি এই খরচগুলো লিপিবদ্ধ করে নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে কিনা। এগুলো পাবলিক ডকুমেন্ট। নির্বাচন কমিশন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক যদি চায় একটি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নোটারাইজড করে তাদের কাছে জমা দিতে তাহলে দূতাবাসের মাধ্যমে ওই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এগুলো আমরা এনে দিতে পারবো।
তিনি বলেন, চুক্তিপত্রে জামায়াত-ই-ইসলামীর ঠিকানা দেওয়া নেই। তবে লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের যে উদ্দেশ্য সেখানে তাদের কথা বলা আছে। জামায়াতকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য এটি যথেষ্ট।
কে, কার সঙ্গে চুক্তি করেছে
বিএনপি ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজি, একিন গ্যাম্প এবং টনি ক্যাডম্যান, এবং র্যাসকি পার্টনারের সঙ্গে চুক্তি করেছে। আবার জামায়াত সরাসরি চুক্তি না করলেও পিস অ্যান্ড জাস্টিস নামক একটি কোম্পানি তাদের হয়ে ক্যাসিডি অ্যাসোসিয়েটস, হাশ ব্ল্যাকওয়েল এবং ক্লোকরুম অ্যাডভাইজারকে নিয়োগ দিয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে মে ২০২০ পর্যন্ত একটি চুক্তি হয়েছে । আমাদের প্রাথমিক হিসাবে এখানে খরচ হয় ১০ লাখ ডলার। একিন গ্যাম্প এবং টনি ক্যাডম্যানের সঙ্গে ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত চুক্তিতে আমাদের হিসাবমতে অন্তত ২৭ লাখ ডলার ব্যয় করা হয়েছে। জামাতের পক্ষে পিস অ্যান্ড জাস্টিস চুক্তি করে অন্তত চারটি। কিন্তু এখানে কত টাকা ব্যয় হয়েছে সেটি পরিষ্কার নয়।
যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মার্কিন আইনে এটা গ্রহণযোগ্য। কিন্তু আমি তাদের উদ্দেশে বলবো একটি রাজনৈতিক দল তাদের দেশের সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যে অর্থ ব্যয় করেছে সেটি যে অবৈধপথে আয় হয়নি সেটা খতিয়ে দেখা হয়।
এই চুক্তিগুলোতে বিএনপি ও জামাতের নাম ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু আমি নিশ্চিত আরও অনেক কাজ তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে হয়েছে তৃতীয় কোনও দেশের ঠিকানা ব্যবহার করে বলেও জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।